Uncategorized
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কী?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কী?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) হল মেশিন, বিশেষ করে কম্পিউটার সিস্টেম, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা সিমুলেট করতে পারে। আজকের আর্টিকেলে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো, এর ব্যবহারের বিস্তৃতি নিয়ে আলাপ করবো, এবং একই সাথে কিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদাহরণ দেখবো। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিভাবে কাজ করে?

how ai works

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এখন প্রচুর শোরগোল। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য এবং পরিষেবাগুলি কীভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে উপকৃত হতে পারে তা নিয়ে রিসার্চ চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো একক প্রোগ্রামিং ভাষা এআই-এর সমার্থক নয়, তবে পাইথন, আর, জাভা, সি++ এবং জুলিয়া এআই প্রোগ্রামারদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়।

বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে, কৃত্রিমভাবে বুদ্ধিমান সিস্টেমগুলি সাধারণত মানুষের কোগনিটিভ ফাংশনগুলির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজ করতে পারে – যেমন ভাষা অনুবাদ করা, গেম খেলা, এবং বিভিন্ন প্যাটার্ন শনাক্ত করা। যে কোন এআই মডেল সাধারণত বিপুল পরিমাণ ডেটা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কীভাবে কাজটি করতে হয় তা শেখে, এবং তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণে মডেলের জন্য নিদর্শনগুলি শনাক্ত করে। 

প্রোগ্রামারদের কাজ হচ্ছে AI এর শেখার প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করে, ভাল সিদ্ধান্তগুলিকে শক্তিশালী করা এবং খারাপগুলিকে নিরুৎসাহিত করা। কিন্তু বর্তমানে কিছু AI সিস্টেম মানুষের তত্ত্বাবধান ছাড়াই বিভিন্ন টাস্ক 

শেখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে – উদাহরণস্বরূপ, আলফা জিরো একটি দাবা খেলার ইঞ্জিন, যা নিজে থেকেই দাবা খেলা শিখে এখন যে কোন মানুষ গ্র্যান্ডমাস্টারকে হারিয়ে দিতে সক্ষম।

এআই সিস্টেমগুলি প্রচুর পরিমাণে লেবেলযুক্ত ডেটা গ্রহণ করে, পারস্পরিক সম্পর্ক এবং প্যাটার্ন বোঝার জন্য ডেটা বিশ্লেষণ করে, এবং ভবিষ্যতের অবস্থা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে এই প্যাটার্নগুলি ব্যবহার করে। 

এআই প্রোগ্রামিং নিম্নলিখিত কোগনিটিভ ফাংশন শেখানোর দিকে জোর দেয়ঃ 

শিখন

এআই প্রোগ্রামিংয়ের এই দিকটি ডেটা কালেকশনের উপর জোর দেয় করে এবং কীভাবে বিক্ষিপ্ত ডেটাকে কার্যকরী তথ্যে পরিণত করা যায় তার নিয়ম তৈরি করে। এই নিয়মকে অ্যালগরিদম বলা হয়। এলগরিদমের মাধ্যমেই একটি নির্দিষ্ট কাজ কীভাবে সম্পূর্ণ করতে হয় তার জন্য ধাপে ধাপে নির্দেশাবলী কম্পিউটিং ডিভাইসকে সরবরাহ করা হয়। 

যুক্তি 

এআই প্রোগ্রামিংয়ের এই দিকটি একটি পছন্দসই ফলাফলে পৌঁছানোর জন্য সঠিক অ্যালগরিদম বেছে নেওয়ার উপায় সন্ধান করে।

স্ব-সংশোধন

ক্রমাগত অ্যালগরিদমগুলিকে সূক্ষ্ম-টিউন করার জন্য এই ধাপটি ডিজাইন করা হয়েছে। দিন দিন এটি আর উন্নত হচ্ছে, এবং আমরা অনেক এডভান্সড ক্ষমতা সম্পন্ন এআই দেখতে পাচ্ছি। 

সৃজনশীলতা

আগে ধারনা করা হতো যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কখনই মানুষের সৃজনশীলতাকে সিমুলেট করতে পারবে না। কিন্তু আধুনিক এআই এই ধারনাকে পুরোপুরি ভুল প্রমাণ করেছে। এখন এআই কবিতা লিখতে পারে, ছবি আঁকতে পারে, সুর সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সৃজনশীল পরামর্শ দিতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নতুন ছবি, নতুন গল্প-কবিতা, নতুন সঙ্গীত, এবং নতুন আইডিয়া তৈরি করতে নিউরাল নেটওয়ার্ক, নিয়ম-ভিত্তিক সিস্টেম, পরিসংখ্যান পদ্ধতি এবং অন্যান্য কৌশল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার

neural network

AI-এর অনেকগুলি ব্যবহার রয়েছে — ভ্যাকসিনের বিকাশ বাড়ানো থেকে শুরু করে সম্ভাব্য জালিয়াতির স্বয়ংক্রিয় সনাক্তকরণ ছাড়া আরও অনেক ভাবেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহৃত হচ্ছে।AI কোম্পানিগুলি ২০২২ সালে প্রায় ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে, যা প্রমাণ করে যে অদূর ভবিষ্যতে আরও অনেক ইন্ডাস্ট্রিতেই আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বহুল প্রচলন দেখতে যাচ্ছি।  

নিরাপদ ব্যাংকিং

বিজনেস ইনসাইডার ইন্টেলিজেন্স-এর ২০২২ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে অর্ধেকেরও বেশি আর্থিক পরিষেবা সংস্থাগুলি ইতিমধ্যে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব উৎপাদনের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সলিউশন ব্যবহার করে। ব্যাঙ্কিংয়ে AI এর প্রয়োগ ৪০০ বিলিয়ন ডলার খরচ কমাতে পারে।

উন্নত ঔষধ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে AI এর ব্যবহারে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে, প্রযুক্তিটি “অসাধারণ প্রতিশ্রুতি রাখে”। কারণ এটি আরও সচেতন স্বাস্থ্য নীতি এবং রোগ নির্ণয়ের নির্ভুলতার উন্নতির মতো সুবিধার দিকে নিয়ে যেতে পারে। .

উদ্ভাবনী মিডিয়া

এআই বিনোদনেও তার ছাপ ফেলেছে। গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চ অনুসারে, মিডিয়া এবং বিনোদনে AI এর বিশ্বব্যাপী বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে।২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিলো প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। হাই-ডেফিনিশন গ্রাফিক্স তৈরি করা, প্লেজারিজম রোধ করা, এমনকি বিজ্ঞাপন বানানোর মত আরও অনেক জটিল কাজে এখন এআই সিদ্ধহস্ত।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতা

ai challenge

যদিও AI একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং দ্রুত বিকশিত প্রযুক্তি, এই উদীয়মান প্রযুক্তির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা এবং চ্যালেজ রয়ছে।

পিউ রিসার্চ সেন্টার ২০২১ সালে ১০২৬০ জন আমেরিকানদের নিয়ে AI এর প্রতি তাদের মনোভাব নিয়ে জরিপ করেছে। ফলাফলে দেখা গেছে, ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা সমানভাবেই উচ্ছ্বসিত এবং উদ্বিগ্ন, এবং ৩৭ শতাংশ উচ্ছ্বসিত থেকে বেশি উদ্বিগ্ন। উপরন্তু, ৪০ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতা বলেছেন যে তারা চালকবিহীন গাড়িকে সমাজের জন্য খারাপ বলে মনে করেন। তবে সোশ্যাল মিডিয়াতে মিথ্যা তথ্যের বিস্তার শনাক্ত করতে AI ব্যবহার করার ধারণাটি আরও ভালভাবে গ্রহণ করেছেন তারা- জরিপে অংশ প্রায় ৪০ শতাংশ এটিকে একটি ভাল হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।

AI উত্পাদনশীলতা এবং দক্ষতার উন্নতির জন্য একটি আশীর্বাদ এবং একই সাথে ‘হিউম্যান এরর’ এর সম্ভাবনা হ্রাস করে। কিন্তু, এতে করে অনেকের কপালেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে। এআই যদি নিখুঁত ভাবে মানুষের কাজ করে ফেলতে পারে, তাহলে অনেকেই তাদের চাকরি হারাতে পারে । তবে এটিও আশা করা হচ্ছে যে এআই নতুন নতুন চাকরীও সৃষ্টি করবে। তবে তার জন্য এআই ডেভেলপমেন্টের সাথে নিজেদের আপডেট করতে থাকতে হবে। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদাহরণ

chatgpt

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি চ্যাটবট থেকে শুরু করে নেভিগেশন অ্যাপস এবং পরিধানযোগ্য ফিটনেস ট্র্যাকার পর্যন্ত অনেক রূপেই পাওয়া যায় । নিচে বেশ কিছু উদাহরণ দেয়া হলো।

চ্যাটজিপিটি

ChatGPT হল একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট যা রচনা লেখা থেকে শুরু করে কোড এবং সহজ প্রশ্নের উত্তর পর্যন্ত বিভিন্ন বিন্যাসে লিখিত রিস্পন্স তৈরি করতে সক্ষম। OpenAI ২০২২ সালের নভেম্বরে এই এআই বাজারে এনেছে।ChatGPT একটি বৃহৎ ভাষার মডেল দ্বারা চালিত যা এটিকে মানুষের লেখাকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুকরণ করতে পারে।

গুগল ম্যাপস

Google Maps ট্র্যাফিকের র‍্যুট এবং চাপ নিরীক্ষণ করতে এবং দ্রুততম রুট কী হবে তা মূল্যায়ন করতে পারে। স্মার্টফোন থেকে লোকেশন ডেটা নিয়ে, সেইসাথে কোন কারণে রাস্তা বন্ধ থাকলে সেই তথ্য দিয়ে গন্তব্যে পৌছাতে সাহায্য করতে পারে এই এপ। 

স্মার্ট এসিস্টেন্ট

সিরি, অ্যালেক্সা এবং কর্টানার মতো ব্যক্তিগত স্মার্ট এসিস্টেন্ট ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিঙয়ের মাধ্যমে এপয়েন্টমেন্ট সেট করতে, অনলাইন তথ্য অনুসন্ধান করতে, এমনকি ব্যবহারকারীর বাড়িতে বৈদ্যুতিক বাতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই স্মার্ট এসিস্টেন্টগুলো ব্যবহারকারীর পছন্দগুলি শিখতে এবং আরও ভাল পরামর্শ এবং যথাযথ প্রতিক্রিয়া সহ সময়ের সাথে সাথে তাদের অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

স্ন্যাপচ্যাট ফিল্টার

স্ন্যাপচ্যাট ফিল্টারগুলি একটি ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড এবং সাবজেক্টের মধ্যে পার্থক্য করতে, মুখের গতিবিধি ট্র্যাক করতে, এবং ব্যবহারকারী যা করছেন তার উপর ভিত্তি করে স্ক্রিনে চিত্র সামঞ্জস্য করতে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে।

ড্রাইভারবিহীন গাড়ি

ড্রাইভারবিহীন গাড়িগুলি ডিপ লার্নিং এর একটি স্বীকৃত উদাহরণ। এই গাড়িগুলো চারপাশের পরিবেশ ও অন্যান্য যানবাহন সনাক্ত করতে, অন্যান্য গাড়ি থেকে তাদের দূরত্ব নির্ধারণ করতে, ট্র্যাফিক সংকেত বুঝতে এবং আরও অনেক কিছু করতে ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।

মুজিরো

MuZero, ডিপমাইন্ড দ্বারা তৈরি একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। সত্যিকারের সাধারণ বুদ্ধিমত্তা অর্জনের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল অগ্রগামী প্রযুক্তি হচ্ছে মুজিরো। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পিছনে চলমান প্রযুক্তিগত ডেটা অবকাঠামো বিবেচনা করলে, আসলে AI-কে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগানো বেশ জটিল এবং ব্যয়বহুল বলে মনে হয়। তবে সৌভাগ্যবশত, কম্পিউটিং প্রযুক্তিতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে, এবং এই আশা করাই যায় যে অতি শীঘ্রই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক সহজলভ্য হয়ে আসবে।